ভারত কেন আ’লীগ নেতাকর্মীদের পুশ-ইন করে না

, প্রকাশ:03 জুন 2025, 10:06 দুপুর
news-banner

ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভূখন্ডে অসহায় মানুষকে ঠেলে দেওয়ার অভ্যাস অনেক পুরনো। বিষয়টি নিয়ে হৈ চৈও কম হয়নি। বাদ-প্রতিবাদের কমতি নেই। ঠিক কি কারণে এভাবে মানুষেকে অন্যায়ভাবে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে এর সঠিক জবাব কখনো দেয়নি পার্শ্ববর্তী দেশটি। কেন তারা এমনভাবে বেআইনী কাজগুলো করে যাচ্ছে; আর বাংলাদেশের সরকার হজম করে যাচ্ছে তাও সাধারণ মানুষের কাছে বোধকাম্য না। অবশ্য নানা সময় নানারকমের মেকানিজম করেও এর সুফল পাওয়া যায়নি। এর সুষ্ঠু সমাধানও হচ্ছে না। গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের আবার ব্যাপক হারে পুশ-ইন কাণ্ড চলছে। আজ শোনা যায় সিলেট সীমানা দিয়ে, কাল শোনা যায় মৌলভী বাজার সীমান্ত এলাকা দিয়ে, আবার কোন দিন শোনা যায় লালমনিরহাট দিয়ে। আবার কোন কোনদিন শোনা যায় একইদিনে অনেকগুলো স্থান দিয়ে পুশ ইন করছে বিএসএফ। আতংকের বিষয় হলো কোন কোন সময় খবর আসে বাংলাদেশে পুশ ইন করার জন্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে কোন এক স্থানে এনে জড়ো করা হচ্ছে। যেকোন সময় তাদের পুশ-ইন করা হবে।

বিজিবির দেওয়া তথ্য বলছে, ভারত থেকে পুশ ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে ভারত, মিয়ানমার, বাংলাদেশÑএই তিন দেশের নাগরিকই আছেন। বাংলাদেশিদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা ২০-২৫ বছর আগে ভারতে গিয়েছিলেন এবং পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন। সেখানে তাঁরা ভারতের আধার কার্ড ও অন্যান্য ডকুমেন্ট পেয়েছিলেন। ভারতের পুলিশ বা বিএসএফ তাঁদের সেসব ডকুমেন্ট রেখে দিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যাঁরা বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত ছিলেন। আবার কেউ কেউ আছেন, যাঁরা ভারতে নিবন্ধিত শরণার্থী এবং ইউএনএইচসিআর ভারতের পরিচয়পত্রধারী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের দিক থেকে যেটা পুশ-ব্যাক, বাংলাদেশের চোখে সেটাই পুশ-ইন। সীমান্তে পুশ-ব্যাক বা পুশ-ইন আসলে এমন একটা পদ্ধতি যেখানে ধরা পড়া ব্যক্তিদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে অন্য দেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই ভারতে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই পদ্ধতি চলে আসছে, যেটা আনুষ্ঠানিকভাবে কেউই স্বীকার করে না। সাম্প্রতিক সময়ে সাগরপথেও পুশ ইন করার খবর পাওয়া যায়। যাদের সুন্দরবন দিয়ে চরের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয় তাদের কাছ থেকে শোনা যায় নির্মম নির্যাতনের খবর।

শোনা যাচ্ছে, শুধু ভারতের গুজরাট এবং রাজস্থানেই গত তিন সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে চিহ্নিত করেছে ওই রাজ্যগুলোর পুলিশ। তাদের দাবি, এই চিহ্নিতরা বেআইনিভাবে বাংলাদেশ থেকে এসে বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি সীমান্ত দিয়ে যাদের পুশ-ব্যাক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও ছিলেন, যাদের গুজরাট থেকে আনা হয়েছিল। পুশ ইন করার আগে তাদের ওপর এমন নির্যাতন চালানো হয় যাতে আবার ভারতে ফিরে যাওয়ার কথা কল্পনাতেও না আনে।

কয়েকদিন আগে রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে যে পুশ-ব্যাকের চেষ্টা হয়েছিল, তা বিজিবি আর সীমান্ত বাসিন্দাদের তৎপরতায় বন্ধ হয়। তারা রাজ জেগে পাহারা বসায়। যাতে বিএসএফ কোনভাবেই তাদের সীমানা দিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে না দিতে পারে। এতে সফলও হয়েছে সীমানাবাসী।

মোটকথা হলো -- অন্যায়ভাবে বেআইনীভাবে যাদের সীমানা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে তাদের ব্যাপারে নাখোশ বাংলাদেশের সরকার এবং মানুষ। কিন্তু আমরা যাদের পুশ ইন করে পাঠালে খুশি হতাম তারা হলো কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্র লীগ, ওলামালীগ, শ্রমিক লীগসহ আরও যত লীগ আছে। তারা রাতের আঁধারে সীমানা পার হয়ে পরাজিত এবং পতিত শক্তি হিসেবে অন্যায় ও অবৈধভাবে ভারতে পাড়ি দিয়েছে। কোন ভিসা ছাড়াই সীমানা পার হয়ে ভারতে চলে গেছে। ভারত কর্তৃক আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়ে সেখানে চলে গেছে। যারা এই দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। ভারতকে যারা অন্যায্য সুবিধা দিয়েছে। যারা তাদের দালালি করেছে। যারা অন্যায়ভাবে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে সব লীগ, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিচারপতি এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ঈমাম পর্যন্ত। সাদা চোখে দেখলেই বোঝা যায় তারা কেন এভাবে কাউকে না জানিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নিয়েছে। কেন তাদের নিজ দেশ, নিজ মাতৃভুমি ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে হলো। তাদের মধ্যে যদি ন্যূনতম দেশপ্রেম থাকতো তাহলেতো অন্তত দেশে থাকার সাহসটুকু থাকতো। দেশে ফিরে আসার সাহসটুকু দেখাতে পারতো।

এই সময়ে এসে আমাদের বক্তব্য হলো যারার চরম অন্যায় করেছে দেশের মানুষের সাথে। যারা খুন গুম হত্যার সাথে জড়িত তাদের বিচার হওয়া দরকার। তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার। অপরাধের প্রতিকার হওয়া দরকার। তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হওয়া দরকার। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বলি-- হে ভারতীয় সীমানার পাহারাদার, তোমাদের কাছে বাংলাদেশের মানুষের আবদার-- তোমরা এক এক করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করে সীমানা দিয়ে পার করে দাও। অসহায় মানুষের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুশ ইন করে দাও, তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ সাদরে গ্রহণ করেেব। তোমাদের সাধুবাদ জানাবে। তোমাদের ধন্যবাদ দিবে। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে মিষ্টি পাঠাবে। হে ভারতীয় সীমানার পাহারাদারেরা তোমরা একজন একজন করে লীগ পাঠাও এক বাক্স করে মিষ্টি নাও। বাংলাদেশের মানুষ মিষ্টির বিনিময়ে তাদের গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

মুল্যবান মন্তব্য করুন