বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন একটি পরিত্যক্ত বিমানঘাঁটি পুনরায় সচল করার পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ভারতের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও কৌশলগত উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার বলছে, এটি একটি সম্ভাব্য প্রকল্প মাত্র , যার মূল উদ্দেশ্য দেশের প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করা , তবে ভারতের গণমাধ্যম এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এতে অতিমাত্রায় আতঙ্কিত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত লালমনিরহাট বিমানঘাঁটিটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে এটি সামরিক ঘাঁটি কিংবা বেসামরিক বিমানবন্দর হিসেবে পুনরায় গড়ে তোলার ভাবনা চলছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কিংবা বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়নি।
তবে ভারতের গণমাধ্যম, বিশেষ করে ফার্স্ট পোস্ট, দাবি করছে — বিমানঘাঁটিটি ভারতের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর থেকে মাত্র ১৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাদের আশঙ্কা, এই প্রকল্পে যদি চীনের প্রযুক্তিগত কিংবা অবকাঠামোগত সহায়তা যুক্ত হয়, তাহলে সেটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। কিছু প্রতিবেদনে চীনা কর্মকর্তাদের লালমনিরহাট ঘাটি পরিদর্শনের কথাও বলা হয়েছে, যদিও বাংলাদেশ কিংবা চীন কোনো পক্ষই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেনি।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত অভ্যন্তরীণভাবে একপ্রকার যুদ্ধাবস্থা প্রস্তুতির মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। শিলিগুড়ি করিডরে রাফাল যুদ্ধবিমান মোতায়েন, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম স্থাপন এবং অন্যান্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মোতায়েন , সব মিলিয়ে ভারতের পদক্ষেপকে অনেকেই অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়াশীল ও আগ্রাসী হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের এই উদ্যোগ তার নিজস্ব প্রতিরক্ষা ও আভ্যন্তরীণ উন্নয়ন চাহিদা পূরণেরই অংশ। এটি কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুমকি নয়। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে , সামরিক জোট বা প্রতিরক্ষা চুক্তির কোন নজির নেই।
তবে চীন-ভারত ভূ-রাজনৈতিক বৈরিতা বহু পুরনো। গালোয়ান উপত্যকার সংঘর্ষ, সীমান্ত উত্তেজনা এবং সম্প্রতি পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তা , সব মিলিয়ে ভারতের দৃষ্টিতে চীন একটি স্পষ্ট প্রতিপক্ষ। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের যেকোন চীন-সম্পৃক্ত প্রকল্পই ভারতের দৃষ্টিতে সন্দেহজনক হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশের লালমনিরহাট বিমানঘাটির উন্নয়ন পরিকল্পনা এখনো সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর্যায়ে থাকলেও, প্রতিবেশী ভারতের উত্তেজনাকর প্রতিক্রিয়া আঞ্চলিক শান্তি ও পারস্পরিক আস্থার ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলেছে। একটি স্বাধীন দেশের আভ্যন্তরীণ উন্নয়ন প্রকল্পে এমন প্রতিক্রিয়া কূটনৈতিকভাবে কতটা যৌক্তিক, তা এখন আলোচনার কেন্দ্রে।