এসএসসির রেজাল্টকে কেন্দ্র করে খুলনায় মিষ্টি ও কেকের চাহিদা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর থেকে শহরের মিষ্টি ও কেকের দোকানে ভিড় দেখা যায় বেশি।
নগরীর বয়রার সাতক্ষীরা ঘোষ ডেইরির স্বত্বাধিকারী সুকান্ত ঘোষ জানান, ‘আগে শুধু এসএসসি পরীক্ষা না যে কোনো পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন মিষ্টির টান পড়তো। প্রতিদিনের তুলনায় দশগুণের বেশি বেশি মিষ্টি বানাতে হতো। সারারাত মিষ্টি বানানোতে কারিগররা ব্যস্ত থাকতেন। এখন তেমন আর মিষ্টি বিক্রি হয় না।’
নগরীর রুপসা এলাকার যাদব ঘোষ ডেইরির মালিক শুভংকর ঘোষ বলেন, ‘করোনার পর থেকে পরীক্ষার ফল কিংবা উৎসব ঘিরে মিষ্টি বিক্রি কমে গেছে। বিশেষ করে রসগোল্লার একটা চাহিদা ছিল। সেই আগের মতো চাহিদা নাই।
কেক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে বেকারি শিল্পে ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। হোমমেড কেক, ডিমাংক কেক, পেস্ট্রি কেক সবই এখন যে কোনো উৎসবে চাহিদায় থাকে। এজন্য বিশেষ দিনে কেক বানানোর অগ্রিম প্রস্তুতি থাকে। প্রয়োজন হলে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে অর্ডার করলে কেক পাওয়া যায়।
নগরীর গল্লামারি এলাকার বরিশাল বেকারির হাসান শেখ বলেন, ‘সবসময় কেক বিক্রি হয়। তবে পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিভিন্ন কোচিং সেন্টার আর বাসাবাড়িতে কেকের চাহিদা বেড়েছে। চকলেট চার কোনা কেক, দুই থেকে তিন পাউন্ডের পার্টি কেক, স্ট্রবেরি কেকের চাহিদা এখন বেশি।’

হোমমেড কেক প্রস্তুতকারী শেফালি আক্তার শেলু বলেন, ‘৩-৪ বছর কেকের ব্যবসা করছি। খুলনায় কেকের একটা বিশেষ চাহিদা রয়েছে। যে কোনো উৎসব কিংবা আনন্দ ভাগাভাগিতে কেক কেটে দিনটি স্মৃতিময় করে রাখছেন মানুষ। এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনের জন্য এক্সট্রা এগারোটা কেকের অর্ডার পেয়েছি। যা অন্যান্য দিনের তুলনায় দুইগুণ বেশি।’
ফুলবাড়িগেট এলাকার হোমমেড কেক ব্যবসায়ী রিভানা হোসেন বলেন, ‘চকলেট কেক আর সিম্পল পার্টি কেকের চাহিদা বেশি। প্রতিদিন ৩-৪ টা অর্ডার থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন বেকারির দোকান থেকেও অর্ডার আসে। এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ঘিরে ছয়-সাতটা অর্ডার বেশি পেয়েছি।’

সোনাডাঙ্গার স্টার কোচিং সেন্টারের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘রেজাল্টের দিন মিষ্টি খাওয়া হয় আবার কেক কাটাও হয়। কেক কেটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছবি তুলে রাখি। পরীক্ষার ফলের দিনের দিনগুলো অনেক স্মৃতিময়। এজন্য সবাই মিলে কেক কাটা হয় বেশি। প্রত্যেকটা ব্যাচের সঙ্গে কেক কেটে ছবি তুলে আনন্দের মুহূর্ত গুলো স্মৃতিময় করে রাখা হয়।’
পিটিআই মোড়ের ইনফিনিটি কোচিংয়ের পরিচালক গোপাল মণ্ডল বলেন, ‘পরীক্ষার ফলের দিন শিক্ষার্থীদের জন্য একটা আনন্দের দিন। শিক্ষকরা চান তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। এজন্য কেক কাটা, মিষ্টি খাওয়া আর অনেক সময় পিকনিকও করা হয়। এ দিনগুলি আসলে অনেক স্মৃতিময়।’

শহরে প্রতিকেজি সাদা ও লাল মিষ্টি ২৫০-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গুড়ের মিষ্টি পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। রসগোল্লা বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ১০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে, চমচম মানভেদে ৩৫০-৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেকারিতে বড় কেক প্রতি পাউন্ড ১৮০ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফ্লেভারের ৬০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। চকলেট কেক বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা পাউন্ডে। বেকারির দোকানে প্রস্তুতকৃত সর্বোচ্চ দুই পাউন্ড পর্যন্ত কেক রয়েছে। বড় সাইজের কেক প্রয়োজন হলে অর্ডার দিলে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি দিচ্ছে বেকারিগুলো।
শহরে মিঠাইয়ের বিভিন্ন আউটলেট শপে কালোজাম ৩৫০ টাকা, ড্রাই রসগোল্লা ৩৫০ টাকা, মাওয়া লাড্ডু ৪২৫ টাকা, মতিচুর লাড্ডু ৩৯৫ টাকা, লাল মোহন ৩৫০ টাকা কেজি দরে, মিঠাই পাতা চমচম ৫৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আউটলেটে অরেঞ্জ পেস্ট্রিকেক বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা পিচ, চকলেট পেস্ট্রিকেট ৯০ টাকা পিচ, রিচ পেস্ট্রিকে ১৪০ টাকা পিচ দরে বিক্রি হচ্ছে, ৩০০ গ্রাম থেকে শুরু করে যে কোনো সাইজের চকলেট কেক বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৬০০ টাকা কেজি দরে এবং ভ্যানিলা ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।