খুলনা মহানগরীতে গত দশ মাসে খুনের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি। এরমধ্যে শুধু পরকীয়া ও পারিবারিক কলহের জেরে প্রাণ গেছে অন্তত আটজনের। বাকিগুলোর পেছনে রয়েছে মাদক ব্যবসা, এলাকা ভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার, ইজিবাইক ছিনতাইসহ নানা সামাজিক অপরাধ। নগরবাসীর ভাষ্য, একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
গত ২৩ মে রাতে খুলনার শিপইয়ার্ড এলাকায় নির্মমভাবে খুন হন নাঈম মোল্লা। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই এলাকার এক গৃহবধূ সুমনা টিকটকে ভিডিও বানিয়ে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তারই একজন প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে অন্য প্রেমিক নাঈমকে নির্মমভাবে খুন করেন। ঘটনার পর সুমনাকে গ্রেফতার করা হয়।
এই একটি ঘটনাই নয়, পুলিশ জানায়, গত দশ মাসে পরকীয়া বা পারিবারিক কলহের জেরে অন্তত আটটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার, এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাব এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ সোহেল বলেন, পারিবারিক নৈতিকতা এবং সামাজিক অনুশাসনের অভাব সমাজে সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নজরদারির ঘাটতি একটি বড় সমস্যা।
নানা বয়স ও পেশার মানুষ খুনের শিকার হওয়ায় খুলনাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নাগরিক সমাজ বলছে, এখন সময় হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক বন্ধন এবং নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার। তা না হলে অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়বে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করছে নাগরিক সমাজ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা বলেন, হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ বা সামাজিক সচেতনতা তেমন চোখে পড়ছে না। পুলিশ এখনও পূর্বের রাজনৈতিক লেজুড় ভিত্তিক চিন্তাভাবনা থেকে বের হতে পারেনি।
অপরদিকে পুলিশ বলছে, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব নয়, সমাজ, পরিবার এবং রাষ্ট্রের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশ মামলায় রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছি। ২৬টি মামলার মধ্যে ২২টি সমাধান হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত ৪৬ আসামিসহ ৮৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই সমস্যা শুধু পুলিশের নয়, বরং পুরো সমাজের। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।