
পাবনার সাঁথিয়ার কাশিনাথপুরে নকল ইনজেকশন পুশ করায় রিপা (২৩) নামে এক কলেজছাত্রী মারা গেছেন। এ ঘটনায় কাওসার ফার্মেসির মালিককে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (২১ মে) সকালে রিপার শরীরে ইঞ্জেকশন পুশ করলে সে কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান।
রিপা সুজানগর উপজেলার দুলাই গ্রামের আ: রহমানের মেয়ে ও এডওয়ার্ড কলেজের মাস্টার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, রিপা অসুস্থ হলে তার শরীরে ট্রাইফয়েড জ্বর ধরা পড়ে। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস ডাক্তার ইলিয়াস হোসেন রিপাকে স্কয়ার কোম্পানির সেফট্রোন ইনজেকশন দুই গ্রাম আইভি শরীরে পুশ করার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রিপাকে দুলাই বাজারের মেডিসিন পয়েন্ট থেকে ইঞ্জেকশন ক্রয় করে (ব্যাচ নম্বর ছিল সাত ডিজিটের) পুশ করা হয়।
পরে বুধবার ২১ মে সকালে আবার একই ইনজেকশন রিপার শরীরে পুশ করলে তিনি কিছুক্ষণ পর মারা যান। পরে ইঞ্জেকশনটি আগের ইঞ্জেকশনের সাথে মিল করলে দেখা যায় এটির ব্যাচ নম্বরের (আট ডিজিটের) গরমিল পাওয়া যায়। যেখানে স্কয়ারের ওষুধ হয় সাত ডিজিটে সেখানে পুশ করা ইনজেকশন আট ডিজিটের ব্যাচ নম্বর রয়েছে। ওই ইঞ্জেকশনটি মেডিসিন পয়েন্ট স্কয়ার কোম্পানির এসআর হাবিবুর রহমান সরকারের কাছ থেকে নেন। মেডিসিন পয়েন্টের বিক্রয় প্রতিনিধি মৃদুল জানান, হাবিবুর রহমান ওই ইনজেকশনটি কাশিনাথপুরের কাওসার ফার্মাসির কাছে থেকে এনে দেন।
এ ঘটনা স্কয়ার কোম্পানিকে জানানো হলে বৃহস্পতিবার (২২ মে) কোম্পানির পক্ষ থেকে পাবনা ড্রাগ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। ড্রাগ সুপার রোকনুজ্জামান ওই দিনই বিষয়টি সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিজু তামান্না ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কাওসার ফার্মেসির মালিক মোস্তফাকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
জানা গেছে, কাশিনাথপুরের কাওসার ফার্মেসি কোম্পানির বাইরে কম দামে বিভিন্ন লটে ওষুধ ক্রয় করে থাকেন। তারা কম দামে নকল ওষুধ ক্রয় করে বেশি দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রয় করে।
কলেজছাত্রীর কাকা ইমরান খান জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানায় আমরা নিরাশ হয়েছি। কাওসার ফার্মেসি নকল ওষুধ বিক্রয় করে মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করছে। আমরা তার ব্যবসা বন্ধের দাবি জানাই।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস ডাক্তার ইলিয়াস হোসেন জানান, ‘ইনজেকশনটি সরাসরি স্কয়ার কোম্পানির এসআর-এর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। পরে আমরা কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ইনজেকশনটি স্কয়ারের নয়। এটি নকল করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে স্কয়ারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘পুশ করা ইনজেকশনটি স্কয়ারের নয়। আমাদের কোম্পানির নাম ব্যবহার করে ওষুধটি নকল করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নকল বন্ধে স্কয়ার প্রতিনিয়ত মোড়ক ও ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়।
পাবনা ড্রাগ সুপার রোকনুজ্জামান জানান, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ফার্মেসির মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা স্কয়ার কোম্পানির কাছে এসআর হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি। তা ছাড়া কলেজছাত্রীর পরিবার চাইলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারে।’
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিজু তামান্না জানান, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর কাওসার ফার্মাসিতে অভিযান চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৭০ হাজার টাকা ফার্মেসির মালিকে জরিমানা করা হয়। যা ভ্রাম্যমাণ আদালতের আইনে সর্বোচ্চ জরিমানা।