
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় বহুদিনের আলোচিত সমস্যা—একই বিচারকের কাঁধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার ভার। এখন সেই কাঠামোয় আনা হচ্ছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। পৃথক দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এটি হতে পারে একটি যুগবদলের সূচনা।
দেওয়ানি আদালতে সম্পত্তি ও ব্যক্তি-অধিকার সংক্রান্ত জটিল মামলা, আর ফৌজদারি আদালতে অপরাধ, খুন, জালিয়াতি ও অপহরণ। প্রকৃতিগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, একজন বিচারককে দীর্ঘদিন ধরে দুটি ভিন্ন জগতে বিচরণ করতে হচ্ছে। এতে দেওয়ানি মামলাগুলো পড়ে থাকে ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ তালিকায়, যা বছরের পর বছর নিষ্পত্তিহীন থেকে যাচ্ছে।
২১ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী জেলা জজশিপ ও সেশনস ডিভিশন আলাদাভাবেই সংজ্ঞায়িত। তা সত্ত্বেও, বাস্তবতায় এই বিভাজন কার্যকর নয়। তাই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সাংগঠনিকভাবে পৃথক আদালত গঠনের এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতির পদ সৃষ্টির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, “একজন বিচারককে যখন একাধিক কোর্ট ও ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তিনি আসলে কোথাও পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন না। এতে বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে।”
চিঠিতে সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করে, এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে মামলা নিষ্পত্তির হার যেমন কমবে, তেমনি বেড়ে যাবে জনভোগান্তি ও বিচারপ্রার্থী অসন্তোষ।
আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ আবু তাহের বলেন, “এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়।” সুপ্রিম কোর্ট বলছে, প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমেও সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট ১৮৮৭–এ পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “আদালত পৃথক হলে বিচারকরা মামলায় আরও সময় দিতে পারবেন, চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।”
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. শাহজাহান সাজু একে ‘দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের পথ’ হিসেবে দেখছেন।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁর অভিভাষণে বলেছিলেন, “একজন বিচারককে একাধিক দায়িত্বে না রেখে একক দায়িত্বে আনতে হবে।” সেই বক্তব্যের বাস্তবায়নই যেন শুরু হলো।
এবার দেখা যাক, প্রশাসন এই কাঠামোগত সংস্কারকে কত দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারে—কারণ এই পদক্ষেপ শুধু আইনের সংস্কার নয়, বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের পথও বটে।