ঈদযাত্রায় ১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত

আরিফুল ইসলাম , প্রকাশ:16 জুন 2025, 02:33 দুপুর
news-banner

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে যাত্রা শুরু ও শেষের মোট ১৫ দিনে সারাদেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজার ১৮২ জন। এর মধ্যে সবথেকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে।

একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ১২ জন আহত হয়েছেন এবং নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন। গত বছরের তুলনায় এবার দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি দুইই বেড়েছে বলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। 

আজ সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব তথ্য তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩১ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা পর্যন্ত (১৪ জুন) বিগত ১৫ দিনে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ও ১১৮২ জন আহত হয়েছেন।

বিগত ২০২৪ সালের ঈদুল আজহায় ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত ও ৭৬২ জন আহত হয়েছিল। এতে দেখা যায়, এবার সড়ক দুর্ঘটনা ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ ও আহত ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারো দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৩৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত, ১৪৮ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৭ দশমিক ২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০ দশমিক ৭৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০ দশমিক ৭৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সড়কে দুর্ঘটনা ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহনগুলো মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেস সম্পন্ন যানবাহন, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।’

এছাড়া যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক ও মহাসড়কে বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেপরোয়া গতির যানবাহনগুলো দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে।

ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে সংগঠিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনের লেগে যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে।

তাছাড়া, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যাতায়াত করতে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনা রোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ১২ দফা সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত যানবাহনের আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে রোড সাইন ও আলোকসজ্জা স্থাপন, দক্ষ চালক তৈরি, ডিজিটাল ফিটনেস ব্যবস্থা, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যান স্ক্র্যাপ করা ও ঈদের আগে কমপক্ষে চার দিনের ছুটি নিশ্চিত করা। এছাড়াও ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী চালকদের ওপর থেকে ভ্যাট ও আয়কর প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক আরমানা সাবিহা হক, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, মনজুর হোসের ইশা ও জিএম মোস্তাফিজু।

সূত্র : ইউএনবি

মুল্যবান মন্তব্য করুন