ভাঙলো কুশিয়ারার ডাইক ॥ পানিতে ভাসছে গোটা জকিগঞ্জ

আরিফুল ইসলাম , প্রকাশ:04 জুন 2025, 06:21 সকাল
news-banner

সিলেট ব্যুরো: গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজানে আসামের পাহাড়ি এলাকায় ভারীবর্ষণের কারণে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর তিনটি স্থানে ডাইক ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারার ডাইক ভেঙে যাওয়ায় পানিতে ভাসছে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জের বেশ কয়েকটি এলাকা। ডাইক ভেঙে যাওয়ায় জকিগঞ্জ উপজেলার ওই তিন স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ শুরু করেছে গত রোববার গভীর রাত থেকে। নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কুশিয়ারার ডাইকে আরও ভাঙন দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, গত রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর ডাইক দিয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে। গতকাল সোমবার ভোররাতে একই ইউনিয়নের বাখরশাল ও সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীল ডাইক ভেঙে যায়। এতে আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে।

এ ছাড়া জকিগঞ্জ পৌর শহরের নিকটবর্তী কেছরী গ্রামের পাশে ডাইকের ওপর দিয়ে শহরে ঢুকছে কুশিয়ারার পানি। মাইজকান্দি গ্রামের কাছে ডাইকের একাংশ ধসে পড়েছে নদীতে। জকিগঞ্জ ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিলা­কান্দি ও আমলশীদসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক জায়গায় ডাইকের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বালু ও মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে ডাইক রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের প্রায় ১শ ফুট ও বাখরশাল গ্রামে ৪০-৫০ ফুট, খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকার ৩০-৪০ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে আশঙ্কাজনকভাবে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী এলাকার লোকজনের বসতঘরে ইতোমধ্যে পানি ঢুকে গেছে। গত রোববার রাত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া শুরু করেছেন। উপজেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।

নদীর তীরবর্তী এলাকার লোকজন জানান, কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় জকিগঞ্জে বারবার বন্যা হচ্ছে। গত রোববার থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ সেদিকে নজর দেয়নি। নদীর তীর উপচে পানি প্রবেশ বন্ধের জন্য বারবার বস্তার চাহিদা জানানো হলেও সরবরাহ করা হয়নি। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে। আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তবে কতটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেন নি ইউএনও। তবে প্রশাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

শান্তিগঞ্জ সংবাদদাতা : শান্তিগঞ্জে থেমে থেমে টানা বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ ভোগান্তির মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। এমনকি ব্যবসা-বানিজ্যে ধ্বস নেমেছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে বন্যা আতংক বিরাজ করছে।

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে থেমে থেমে কখনো ভারী ও কখনো বজ্রপাত সহ হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই বজ্রপাত আর বৃষ্টিপাতের কারণে জনসাধারণ ঘরের বাইরে বেরুতে সাহস পাচ্ছেন না। বিত্তশালীরা যেমন-তেমন বিশেষ করে শ্রমজীবী দিনমজুর নিম্ন আয়ের মানুষেরা চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। এমনকি প্রবল বৃষ্টিপাতে আর উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরে প্রবেশ করার পাশা-পাশি নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। এতে করে জনমনে বন্যা আতংক বিরাজ করছে। সোমবার (২জুন) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ও জানা গেছে, অতি বৃষ্টির ফলে একমাত্র অফিস -আদালতগামীরা বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করলেও হাট-বাজারে ও সড়ক পথে জনসাধারণের চলাচল নেই বললেই চলে। যার ফলশ্রুতিতে সিএনজি, রিক্সা ও অটোরিক্সা চালকদের রোজগারে ভাটা পড়ার পাশা-পাশি হাটবাজার এর ব্যবসা বাণিজ্যে ধ্বস নেমেছে।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) সংবাদদাতা : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ব্যাক্তি উদ্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করা হয়েছে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের মালিপাড়া এলাকায় মালিপাড়া-রঘুনাথপুর সড়কটি সংস্কার করা হয়।

জানা যায়, গত বন্যায় ও বৃষ্টিতে পোগলদিঘা ইউনিয়নের মালিপাড়া ও রঘুনাথপুর রাস্তার মাঝখানে রাস্তা ভেঙে গিয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা সাময়িকভাবে চলাচলের জন্য মেরামত করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি অতি বৃষ্টির কারণে আবার যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। মানুষের চলাচলের যাতে সমস্যা না হয় তাই নিজস্ব অর্থায়নে মালিপাড়া গ্রামের আলহাজ আব্দুল লতিফ চেয়ারম্যানের ছেলে রোবায়েত হোসেন বিপুল মাস্টারের ছেলের উদ্যোগে রাস্তাটি সংস্কার করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, আব্দুল কুদ্দুস, গণেশ মিয়া, সোহাগ মিয়া, আকাশ আহমেদ স্বপন, মনির সরকার, জামিল সরকার, বিজয় আহমেদ, রাহুল কবীর, সম্রাট, নিরব হাসান, নয়ন মিয়া, রাকিবসহ স্থানীয়রা।

হু হু করে বাড়ছে পানি লালমনিরহাটে

মো. লাভলু শেখ লালমনিরহাট : গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে তিস্তা পাড়ের মানুষজন বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছে এবং যে কোনো সময় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন বন্যা ও নদীভাঙন আতংকে পড়েছে।

এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৮-১০টি চর এলাকায় পানি উঠতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এছাড়াও লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন এবং আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও গোর্বধন এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে লালমনিরহাটসহ উত্তরের কয়েকটি জেলায় তিস্তা পাড়ের হাজারো মানুষ বন্যা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।

এদিকে গতকাল সোমবার ২ জুন সন্ধ্যা ৬ টায় বন্যা পূর্বাভাসের তথ্যে জানা যায়, তিস্তা নদীঃ

(১) ডালিয়া পয়েন্ট-পানির সমতল ৫১.৬৮ মিটার (বিপদসীমা = ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৪৭ সে.মি নিচে। (২) কাউনিয়া পয়েন্ট-পানির সমতল ২৮.৯৫ মিটার (বিপদসীমা = ২৯.৩০ মিটার) যা বিপদসীমার ৩৫ সে.মি নিচে। ধরলা নদীঃ (১) শিমুলবাড়ি পয়েন্ট-পানি সমতল ২৮.৯৫ মিটার, (বিপদসীমা = ৩০.৮৭ মিটার) যা বিপদসীমার ১৯২ সে.মি নিচে। (২) পাটগ্রাম পয়েন্ট-পানি সমতল ৫৬.৬০ মিটার, (বিপদসীমা =৬০.৩৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৩৭৫ সে.মি নিচে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, উজানে ভারতের সিকিমেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে তিস্তার পানি হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করেছে। পানি এখনও বিপদসীমার নিচে আছে। তবুও আমরা সতর্কে আছি।

মুল্যবান মন্তব্য করুন